কানে শোনার সমস্যা

কানে শোনার সমস্যা?

জানুন এর কারণ ও সমাধান

মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের একটি হলো শ্রবণশক্তি। এই শ্রবণশক্তিতে সামান্য সমস্যা দেখা দিলেই দৈনন্দিন জীবন অনেক কঠিন হয়ে যেতে পারে। কানে শব্দ কম শোনা, শব্দ বিকৃত শোনা বা কান পুরোপুরি বধির হয়ে যাওয়া—সবই কানে শোনার সমস্যার অন্তর্ভুক্ত।

এ ধরনের সমস্যার মূল কারণগুলো জানলে তা থেকে বাঁচা সহজ হয় এবং প্রয়োজনে সঠিক চিকিৎসাও নেওয়া যায়।

কানে শোনার সমস্যার কারণ

১. কানের ভেতরে ময়লা জমা
অনেক সময় কানের ভিতরে জমে থাকা ময়লা বা ইয়ারওয়াক্স ব্লক তৈরি করে, ফলে শব্দ সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে না।

২. কানের ইনফেকশন
ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণে কান ফুলে ওঠে, ব্যথা হয় ও শ্রবণ কমে যায়।

৩. উচ্চ শব্দে বেশি সময় থাকা
হেডফোনে খুব জোরে গান শোনা, ফ্যাক্টরি বা কনসার্টের মতো পরিবেশে বেশি সময় থাকা কানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৪. বার্ধক্য
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কান ও নার্ভের স্বাভাবিক শক্তি কমে যায়। এটিকে প্রেসবাইকিউসিস বলা হয়।

৫. আঘাত বা দুর্ঘটনা
মাথা বা কানে আঘাত লাগলে শ্রবণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬. বংশগত কারণ
কিছু মানুষের জন্মগতভাবেই শ্রবণ সমস্যা থাকে অথবা বয়সের সাথে বাড়তে পারে।

৭. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ শ্রবণ শক্তির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘদিন সেবনের ক্ষেত্রে।

শ্রবণ সমস্যা

১. Conductive Hearing Loss
কানের বাহ্যিক বা মধ্যকর্ণে সমস্যা হলে শব্দ ভেতরে সঠিকভাবে ঢুকতে পারে না। যেমন: কানে ময়লা জমে থাকা, কানের পর্দা ছিদ্র হওয়া, কানে সংক্রমণ, বা কানের হাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।

২. Sensorineural Hearing Loss
অন্তঃকর্ণ বা শ্রবণ স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সমস্যা হয়। যেমন: বয়সের কারণে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, বেশি শব্দে থাকা, জন্মগত ত্রুটি, কিছু ওষুধের প্রভাব।

৩. Mixed Hearing Loss
উপরের দুই ধরনের সমস্যা একসাথে হলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

শ্রবণ সমস্যার কারণ জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়। যেমন: Pure Tone Audiometry, Tympanometry, OAE, BERA ইত্যাদি।

শ্রবণ যন্ত্রের ধরণ:

১. BTE (Behind The Ear): কানের পিছনে থাকে। শিশুদের জন্য বেশি ব্যবহৃত।
২. RIC (Receiver in Canal): ছোট এবং আরামদায়ক। শব্দ খুব স্পষ্ট পাওয়া যায়।
৩. ITE (In The Ear): পুরো যন্ত্রটি কানের ভেতরে থাকে, ব্যাটারি বেশি দিন চলে।
৪. CIC (Completely In Canal): খুব ছোট। বাইরে থেকে প্রায় দেখা যায় না।
৫. Digital Hearing Aid: ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক। পরিবেশ অনুযায়ী শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

১. Cochlear Implant: যাদের প্রায় সম্পূর্ণ বধিরতা আছে তাদের জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হয়।
২. Bone Conduction Device: Conductive hearing loss থাকলে ব্যবহার করা হয়।
৩. FM System: শ্রবণ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়, দূর থেকে শিক্ষকের কথা স্পষ্টভাবে শোনা যায়।
৪. Alerting Devices: অ্যালার্ম, দরজার বেল, ফোন কল ইত্যাদি ভিজ্যুয়াল বা কম্পনের মাধ্যমে জানান দেয়।